অন্ধ বধূ
-যতীন্দ্রমোহন বাগচী
অন্ধ চোখের দ্বন্ধ চুকে যায়!
দুঃখ নাইক সত্যি কথা শোন্,
অন্ধ গেলে কী আর হবে বোন?
বাঁচবি তোরা দাদা তো তার আগে?
এই আষাড়েই আবার বিয়ে হবে,
বাড়ি আসার পথ খুঁজে না পাবে
দেখবি তখন প্রবাস কেমন লাগে?
কী বল্লি ভাই,কাঁদবে সন্ধ্যা-সকাল?
হা অদৃষ্ট, হায়রে আমার কপাল!
কত লোকেই যায় তো পরবাসে
কাল-বোশেখে কে না বাড়ি আসে?
চৈতালি কাজ, কবে যে সেই শেষ!
পাড়ার মানুষ ফিরল সবাই ঘর,
তোমার ভায়ের সবই স্বতন্তর
ফিরে আসার নাই কোন উদ্দেশ!
ঐ যে হথায় ঘরের কাঁটা আছে
ফিরে আসতে হবে তো তার কাছে!
এই খানেতে একটু ধরিস ভাই,
পিছল-ভারি ফসকে যদি যাই
এ অক্ষমার রক্ষা কী আর আছে!
আসুন ফিরে অনেক দিনের আশা,
থাকুন ঘরে, না থাক্ ভালবাসা
তবু দুদিন অভাগিনীর কাছে!
জন্ম শোধের বিদায় নিয়ে ফিরে’
সেদিন তখন আসব দীঘির তীরে।
‘চোখ গেল ঐই চেঁচিয়ে হ’ল সারা।
আচ্ছা দিদি, কি করবে ভাই তারা
জন্ম লাগি গিয়েছে যার চোখ !
কাঁদার সুখ যে বারণ তাহার ছাই!
কাঁদতে গেলে বাঁচত সে যে ভাই,
কতক তবু কমত যে তার শোক!
’চোখ’ গেল– তার ভরসা তবু আছে
চক্ষুহীনার কী কথা কার কাছে !
টানিস কেন? কিসের তাড়াতাড়ি
সেই তো ফিরে’ যাব আবার বাড়ি,
একলা-থাকা-সেই তো গৃহকোণ
তার চেয়ে এই স্নিগ্ধ শীতল জলে
দুটো যেন প্রাণের কথা বলে
দরদ-ভরা দুখের আলাপন
পরশ তাহার মায়ের স্নেহের মতো
ভুলায় খানিক মনের ব্যথা যত!
এবার এলে, হাতটি দিয়ে গায়ে
অন্ধ আঁখি বুলিয়ে বারেক পায়ে
বন্ধ চোখের অশ্রু রুধি পাতায়,
জন্ম-দুখীর দীর্ঘ আয়ু দিয়ে
চির-বিদায় ভিক্ষা যাব নিয়ে
সকল বালাই বহি আপন মাথায়!
দেখিস তখন, কানার জন্য আর
কষ্ট কিছু হয় না যেন তাঁর।
তারপরে এই শেওলা-দীঘির ধার
সঙ্গে আসতে বলবনা’ক আর,
শেষের পথে কিসের বল’ ভয়
এইখানে এই বেতের বনের ধারে,
ডাহুক-ডাকা সন্ধ্যা-অন্ধকারে
সবার সঙ্গে সাঙ্গ পরিচয়।
শেওলা দীঘির শীতল অতল নীরে
মায়ের কোলটি পাই যেন ভাই ফিরে’